সংবাদচর্চা রিপোর্ট: নারায়ণগঞ্জে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার ছোট-বড় সব ধরনের খামারিরা। এমনকি এভাবে খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে অচিরেই খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। যদিও গো-খাদ্য ব্যবসায়ীদের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে গো-খাদ্যের কাঁচামালের সরবরাহ কম। ফলে তারাও এ ব্যবসায় এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযারী, নারায়ণগঞ্জে সর্বমোট ৪ হাজার ৯শ ৮৭টি খামার রয়েছে। তার মধ্যে নিবন্ধিত ২ হাজার ১শ ৩০টি এবং অনিবন্ধিত রয়েছে আরও ১২শ ২৫টি দুগ্ধ খামার। অন্যদিকে ষাঁড়ের খামার রয়েছে ১ হাজার ৬শ ৪২টি। যার মধ্যে নিবন্ধিত ১শ ৪৪টি এবং ১ হাজার ৪শ ৯৮টি অনিবন্ধিত। এসব খামারে গবাদিপশুর সংখ্য প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার। এসব পশুর জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গো-খাদ্য প্রয়োজন। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে এই খাতকে বাঁচাতে হলে এখনই বিকল্প খাদ্যের উৎস খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি খামারে ঘুরে দেখা যায়, দানাদার খাবারের পরিবর্তে ঘাস জাতীয় খাবার দেয়া হচ্ছে গবাদিপশুকে। আবার অনেক জায়গায় ঘাসের পরিমাণ কম হওয়ায় দানাদার খাদ্য দেয়া হচ্ছে। যে কারণে গবাদিপশু দ্রুত বেড়ে উঠতে ও লালন পালনে সমস্যা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
গতকাল দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ টাকায়, ৪০ কেজি ওজনের এক বস্তা ধানের তুষের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা তিলের খৈল ৩২০০ টাকা, ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা মসুরের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১০২০ থেকে ১০৫০ টাকায়, ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা খেসারির ভুসি ১২৬০ টাকা এবং ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুট্টার ভুসির বাজার দর ৫৭৫ টাকা, ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা সয়াবিনের খৈল বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫০ টাকায়, খুদ প্রতি বস্তা ১৪০০ টাকা, চিটাগুড় ২৫ কেজি কন্টেনারের দাম ১ হাজার টাকা।
গোগনগর এলাকার গরু খামারি নূর মোহাম্মদ বলেন, বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বেশি, সে তুলনায় দুধের দাম অনেক কম। যার কারণে আমরা খামারিরা কষ্টে আছি। গরুর যে খাদ্যের দাম ছিল ২০ টাকা সেটা এখন ৪০ টাকা হয়ে গেছে। যে খুদের বস্তা ১ হাজার টাকা ছিলো সেটা ১৪০০ টাকা হয়ে গেছে। খুচরা বাজারে সয়াবিনের খৈল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমি আগে ২০০ কেজি দুধ বিক্রি করতাম। আগে গরু ছিল ৩০ থেকে ৩৫টা। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুধের গরু বিক্রি করে এখন ৪-৫টা রয়েছে। যার কারণে আমার দুধ বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে।
কলাগাছিয়া ইউনিয়নের রহম আলী বলেন, আমার তিনটি গরু আছে। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। এছাড়া খৈলের দামও বেড়েছে। গরুর চাহিদামতো আমরা খাবার দিতে পারছি না। যার কারণে দুধও এখন কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকার মেসার্স লাকি ট্রেডার্সের মালিকের ছেলে ফয়সাল বলেন, গত কয়েক মাস ধরে গমের ভুসির দাম বাড়েনি, আগের মতই আছে। উল্টো সিজন না থাকায় দাম আরও কমেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিকদার ট্রেডার্সে কর্মরত এক ব্যাক্তি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে গমের ভুসির দাম বস্তা প্রতি (৩৭ কেজি) বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে গো-খাদ্যের কাঁচামালের সরবরাহ কম। ফলে তারাও এ ব্যবসায় এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, খামার বাঁচাতে হলে গো-খাদ্যের খরচ কমাতে হবে। তাই দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে গবাদিপশুকে জমিতে লাগানো কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে দেশীয় খাবারেই গবাদিপশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যাবে। তার পওরও দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন আছে। আর তাই খামারিরা কোথা থেকে খাবার সংগ্রহ করেন এর একটা তালিকা তৈরি করতে হবে। এছাড়া যারা এই খাবারটা বিক্রি করে বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়িদের লাইসেন্সের আওতায় আনার কথা আমরা বলছি। তার পরেও যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য বাজারে কারসাজি করার চেষ্টা করে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।